কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নের কাজসহ বন্দর থেকে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। শুল্কায়নের কাজ বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। কর্মবিরতিতে বন্দর থেকে পন্য খালাস নিতে না পারায় প্রতিদিন বন্দরের ভাড়া গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে যাত্রী চলাচল ও বন্দরে ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য আনলোড স্বাভাবিক আছে।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলার পর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট বলছে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হলে ভারত থেকে আমদানি কেন হবে না। আইন হলে দুটোই বন্ধ হবে এই অজুহাতে তারা রপ্তানি পণ্য নিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে কারণে আমদানি-রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। বুধবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ের পর থেকে এনবিআর এর চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবীসমূহের বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ওইদিন এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী শনিবার ও রবিবার কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
এদিকে বুধবার দুপুরের পর থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়নের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এই ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়নের সকল ধরনের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। গত ১৪ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কলম বিরতির কারণে অন্যান্য শুল্ক হাউজ এর মত বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারাও কলম বিরতি পালন করে আসছিল।
বুধবার সকাল থেকে দেখা যায়, কাস্টমস হাউজ খোলা আছে তবে অধিকাংশ টেবিলই খালি। কর্মকর্তারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। কিছু কর্মকর্তা আসনে থাকলেও দরজা বন্ধ করে কোন কাজ করছেন না। বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে ২টা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকলেও ২টার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক আছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। আর পণ্য খালাস না হওয়ার কারণে আমদানিকারকদের প্রতিদিন বন্দরের ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি সত্বেও বেনাপোল বন্দর দিয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল। তবে ২টার পর থেকে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি পণ্য না নিলে রপ্তানি পণ্য নিবে না বলে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান কাস্টমস কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্ম বিরতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এএজে